মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট (Microsoft) তাদের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথের (Brad Smith) অফিসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দুই কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রিকি ফামেলি (Riki Fameli) এবং আন্না হ্যাটল (Anna Hattle) গতকাল সাতজনের একটি বিক্ষোভকারী দলের সঙ্গে ব্র্যাড স্মিথের অফিসে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করেছিলেন। এই ঘটনার জেরে তাদের আজ চাকরিচ্যুত করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা টুইচ (Twitch) প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে স্মিথের অফিসে প্রবেশের দৃশ্য প্রচার করেন। তারা মাইক্রোসফটের ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান। এই ঘটনায় মাইক্রোসফটকে তাদের নির্বাহী ভবন (executive building) সাময়িকভাবে লকডাউন করতে বাধ্য হতে হয়। বিক্ষোভের সময় আন্না হ্যাটল এবং রিকি ফামেলিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে মাইক্রোসফটের সাবেক কর্মী ভানিয়া আগ্রাওয়াল (Vaniya Agrawal), হোসাম নাসর (Hossam Nasr), এবং জো লোপেজ (Joe Lopez) এবং গুগলের একজন সাবেক কর্মী ও আরেকজন প্রযুক্তি কর্মীও ছিলেন।
মাইক্রোসফটের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুখপাত্র গিকওয়্যারকে (GeekWire) জানিয়েছেন, “কোম্পানির নীতি এবং আচরণবিধি (code of conduct) গুরুতরভাবে লঙ্ঘনের কারণে দুই কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।” তবে মাইক্রোসফট দ্য ভার্জকে (The Verge) কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেছে।
বিক্ষোভের কয়েক ঘণ্টা পর ব্র্যাড স্মিথ তার অফিসে একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন। ডেস্কের কিনারায় বসে ইউটিউবে (YouTube) সরাসরি সম্প্রচারে তিনি বলেন, “মাইক্রোসফট মধ্যপ্রাচ্যে তার মানবাধিকার নীতি (human rights principles) এবং চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও জানান, এই মাসের শুরুতে দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian) পত্রিকায় মাইক্রোসফটের অ্যাজিওর ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম (Azure cloud platform) ফিলিস্তিনিদের নজরদারিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কোম্পানি তদন্ত শুরু করেছে।
এর আগেও আন্না হ্যাটল গত সপ্তাহে মাইক্রোসফটের সদর দপ্তরে বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেবার রেডমন্ড পুলিশ (Redmond police) ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল, যখন একদল বিক্ষোভকারী মাইক্রোসফটের ক্যাম্পাসে একটি প্লাজা দখল করে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কোম্পানির চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে “লিবারেটেড জোন” (Liberated Zone) নামে একটি শিবির স্থাপন করে এবং মাইক্রোসফটের সাইনবোর্ডে লাল রং ঢেলে দেয়।
সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভগুলো “নো অ্যাজিওর ফর অ্যাপারথাইড” (No Azure for Apartheid) নামে একটি গ্রুপের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে। বর্তমান ও সাবেক মাইক্রোসফট কর্মীদের এই গ্রুপটি ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে মাইক্রোসফটের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিক্ষোভ মাইক্রোসফটের নির্বাহীদের বাড়ি এবং অফিস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
মাইক্রোসফটের এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রযুক্তি সম্প্রদায়ের মধ্যেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর রাজনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক এবং এর প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে।