অ্যাপল ও স্যামসাং মিলে টেক্সাসে আইফোনের জন্য উন্নত ইমেজ সেন্সর তৈরি করছে

অ্যাপল স্যামসাংয়ের সাথে টেক্সাসে আইফোনের জন্য তিন-স্তরীয় ইমেজ সেন্সর তৈরি করছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাবে সনির একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙছে।

আনিস আফিফি
লিখেছেন:
আনিস আফিফি
লিখেছেন:আনিস আফিফি
সম্পাদক
আমি আনিস আফিফি — একজন উদ্যোক্তা এবং ওয়েব ডেভেলপার, যার একটি বড় স্বপ্ন হলো মানবজাতির জন্য পৃথিবীকে আরও ভালো একটি জায়গায় পরিণত করা। আমি ব্র্যান্ড তৈরি...
- সম্পাদক

২০২৫ সালে অ্যাপল স্যামসাংয়ের সাথে টেক্সাসের একটি কারখানায় অত্যাধুনিক চিপ তৈরির প্রযুক্তি চালু করতে কাজ করছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চিপগুলো আইফোনের জন্য তিন-স্তরীয় স্ট্যাকড ইমেজ সেন্সর, যা দ্রুত ক্যামেরা শুটিং গতি, উচ্চ ফ্রেম রেটে ৮কে ভিডিও এবং রোলিং শাটারের “জেলো” বিকৃতি হ্রাস করবে। এই উন্নয়নের ফলে সনি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে অ্যাপলের আইফোন ক্যামেরা সেন্সরের একমাত্র সরবরাহকারী ছিলেন, তাদের একচেটিয়া আধিপত্য হারাতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা এই সহযোগিতার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য তুলে ধরব।

অ্যাপল-স্যামসাং সহযোগিতা: একটি নতুন অধ্যায়

অ্যাপল এবং স্যামসাংয়ের মধ্যে এই সহযোগিতা দুই প্রযুক্তি জায়ান্টের মধ্যে একটি আংশিক সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়। ২০১১ সালে অ্যাপল স্যামসাংয়ের পরিবর্তে তাইওয়ানের টিএসএমসি-কে তাদের প্রাথমিক চিপ প্রস্তুতকারক হিসেবে নির্বাচন করে, যার ফলে স্যামসাংয়ের চিপ ব্যবসায় ধস নামে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে স্যামসাং অ্যাপলের সাথে এই চুক্তি এবং টেসলার জন্য ১৬.৫ বিলিয়ন ডলারের চিপ সরবরাহ চুক্তির মাধ্যমে তাদের ফাউন্ড্রি ব্যবসায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

এই নতুন সেন্সরগুলো তিন-স্তরীয় স্ট্যাকড ডিজাইনের, যা ফটোডায়োড, ট্রান্সফার এবং লজিক স্তর নিয়ে গঠিত। এই ডিজাইনের সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ: সেন্সরের পিছনে প্রসেসিং চিপ সংযুক্ত থাকায় পিক্সেল ডেটার ভ্রমণ দূরত্ব কমে যায়, যা ক্যামেরার প্রতিক্রিয়াশীলতা বাড়ায়।
  • উন্নত ছবির গুণমান: কম আলোতে উন্নত পারফরম্যান্স, উচ্চ ডায়নামিক রেঞ্জ এবং কম নয়েজ সহ উচ্চ-মানের ছবি।
  • উচ্চ ফ্রেম রেট: ৮কে ভিডিও রেকর্ডিংয়ে উচ্চ ফ্রেম রেট সমর্থন করে, যা ভিডিওর মান উন্নত করে।

এই প্রযুক্তি আইফোন ১৮ সিরিজে ব্যবহৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ২০২৬ সালে লঞ্চ হতে পারে।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং মার্কিন উৎপাদন

এই সহযোগিতার পেছনে একটি বড় কারণ হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ১০০% আমদানি শুল্ক নীতি, যা বিদেশে উৎপাদিত চিপের ওপর প্রযোজ্য হবে। স্যামসাং, টিএসএমসি এবং এসকে হাইনিক্সের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন সুবিধা থাকা কোম্পানিগুলো এই শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাবে। তবে, সনির ইমেজ সেন্সরগুলো তাইওয়ানে টিএসএমসি-র মাধ্যমে উৎপাদিত হয় এবং সনির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো চিপ কারখানা নেই, যা তাদের এই শুল্কের আওতায় ফেলে। এই পরিস্থিতি অ্যাপলকে স্যামসাংয়ের সাথে কাজ করতে উৎসাহিত করেছে, যারা টেক্সাসের অস্টিনে তাদের ১৭ বিলিয়ন ডলারের ফ্যাব বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

অ্যাপলের এই পদক্ষেপ তাদের ১০০ বিলিয়ন ডলারের আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোগ্রামের অংশ, যা মোট ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সাপ্লাই চেইন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই উদ্যোগ শুধু শুল্ক এড়ানোর জন্য নয়, বরং সাপ্লাই চেইনের ঝুঁকি কমাতে এবং মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রাখতে।

সনির প্রতিক্রিয়া এবং বাজারের গতিশীলতা

ইমেজ সেন্সর বাজারে সনির ৪৫% শেয়ার রয়েছে, যেখানে স্যামসাংয়ের শেয়ার ১৯%। সনি ব্যাকসাইড ইলুমিনেশন, দুই-স্তরীয় স্ট্যাকড সেন্সর এবং মিররলেস ক্যামেরায় গ্লোবাল শাটারের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে শীর্ষে ছিল। তবে, স্যামসাংয়ের নতুন তিন-স্তরীয় সেন্সর, যা PD-TR-Logic কনফিগারেশনে তৈরি, সনির বর্তমান Exmor RS সেন্সরের চেয়ে উন্নত বলে দাবি করা হচ্ছে। এই কনফিগারেশনে ফটোডায়োড স্তর আলো ক্যাপচার করে, ট্রান্সফার স্তর নয়েজ কমায় এবং লজিক স্তর কম্পিউটেশনাল ফটোগ্রাফি পরিচালনা করে।

সনি এই খবরের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, “আমরা আমাদের গ্রাহকদের জন্য উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি প্রদানে আত্মবিশ্বাসী এবং বৃহত্তর সেন্সর আকার ও ঘনত্বের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নতি অব্যাহত রাখব।” তবে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সনি তাদের সেন্সর বিভাগ বিক্রির পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য

বাংলাদেশে, যেখানে স্মার্টফোন ব্যবহার এবং ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি দ্রুত বাড়ছে, এই উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি ভোক্তাদের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। উন্নত ক্যামেরা পারফরম্যান্স, বিশেষ করে কম আলোতে ছবি তোলা এবং ৮কে ভিডিও রেকর্ডিং, বাংলাদেশের তরুণ কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ভ্লগার এবং ফটোগ্রাফারদের জন্য আকর্ষণীয় হবে। তবে, শুল্ক নীতির কারণে আইফোনের দাম বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের বাজারে এর চাহিদা প্রভাবিত হতে পারে।

অন্যদিকে, এই সহযোগিতা বাংলাদেশের টেক শিল্পের জন্যও একটি শিক্ষা। স্থানীয় সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার কোম্পানিগুলোর জন্য সাপ্লাই চেইন বৈচিত্র্যকরণ এবং উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। বাংলাদেশের ডেভেলপার এবং স্টার্টআপগুলোর জন্যও এটি একটি সুযোগ, যেখানে তারা ওপেন-সোর্স এবং ক্লাউড-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের উদ্ভাবন বাড়াতে পারে।

উপসংহার

অ্যাপল এবং স্যামসাংয়ের এই সহযোগিতা শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নতির দিক থেকেই নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কৌশলের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাবে অ্যাপল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বাড়াচ্ছে, এবং স্যামসাংয়ের সাথে এই অংশীদারিত্ব তাদের সাপ্লাই চেইনের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের ভোক্তা এবং টেক শিল্পের জন্য, এই উন্নয়ন উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ এবং বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের জটিলতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়।

Avatar Of আনিস আফিফি
লিখেছেন:আনিস আফিফি
সম্পাদক
ফলো:
আমি আনিস আফিফি — একজন উদ্যোক্তা এবং ওয়েব ডেভেলপার, যার একটি বড় স্বপ্ন হলো মানবজাতির জন্য পৃথিবীকে আরও ভালো একটি জায়গায় পরিণত করা। আমি ব্র্যান্ড তৈরি করি, ডিজিটাল সমস্যাগুলোর সমাধান করি। এবং এমন একটি ভবিষ্যত তৈরি করতে চাই যা মানুষকে ক্ষমতায়িত করে।
মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

০%