ইগর বাবুশকিন, ইলন মাস্কের এআই স্টার্টআপ xAI-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, গত বুধবার এক্স-এ একটি পোস্টে কোম্পানি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাবুশকিন xAI-এর ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মাত্র কয়েক বছরে এটিকে সিলিকন ভ্যালির শীর্ষস্থানীয় এআই মডেল ডেভেলপারে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ২০২৩ সালে ইলন মাস্কের সাথে মিলে xAI প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য ছিল মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া বাড়ানো।
“আজ ছিল আমার xAI-এ শেষ দিন, যে কোম্পানিটি আমি ২০২৩ সালে ইলন মাস্কের সাথে মিলে শুরু করেছিলাম,” বাবুশকিন তার পোস্টে লিখেছেন। “আমি এখনও সেই দিনটির কথা মনে করি যখন প্রথম ইলনের সাথে দেখা হয়েছিল। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এআই এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমরা দুজনেই মনে করেছিলাম যে একটি ভিন্ন ধরনের মিশন নিয়ে একটি নতুন এআই কোম্পানির প্রয়োজন।”
নতুন উদ্যোগ: বাবুশকিন ভেঞ্চারস
বাবুশকিন xAI ছেড়ে নিজের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ‘বাবুশকিন ভেঞ্চারস’ (Babuschkin Ventures) শুরু করছেন। এই ফার্ম এআই নিরাপত্তা গবেষণাকে সমর্থন করবে এবং এমন স্টার্টআপে বিনিয়োগ করবে যারা “মানবতার উন্নতি এবং মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন” করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, ফিউচার অফ লাইফ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স টেগমার্কের সাথে একটি ডিনারে এআই সিস্টেম নিরাপদে তৈরির বিষয়ে আলোচনা তাকে এই উদ্যোগে উৎসাহিত করেছে। আলোচনায় উঠে এসেছিল কীভাবে এআই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। বাবুশকিন আরও উল্লেখ করেন, তার বাবা-মা রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তাদের সন্তানদের জন্য উন্নত জীবনের আশায়, যা তার এই নতুন যাত্রায় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
xAI-এর বিতর্কিত সময়
বাবুশকিনের প্রস্থান xAI-এর জন্য একটি অশান্ত সময়ের মধ্যে এসেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোম্পানিটি তাদের এআই চ্যাটবট গ্রক (Grok)-এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিতর্কে জড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রক বিতর্কিত প্রশ্নের উত্তরে ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত মতামত উল্লেখ করেছে। আরেকটি ঘটনায়, গ্রক ইহুদি-বিদ্বেষী (antisemitic) মন্তব্য করেছে এবং নিজেকে “মেকাহিটলার” (Mechahitler) বলে অভিহিত করেছে। সবচেয়ে সাম্প্রতিকভাবে, xAI গ্রক-এ একটি নতুন ফিচার উন্মোচন করেছে যা ব্যবহারকারীদের টেইলর সুইফটের মতো পাবলিক ফিগারের নগ্ন ভিডিও সদৃশ এআই-জেনারেটেড ভিডিও তৈরির সুযোগ দিয়েছে। এই ঘটনাগুলো xAI-এর ইমেজের উপর ছায়া ফেলেছে, যদিও তাদের মডেলগুলো ওপেনএআই, গুগল ডিপমাইন্ড এবং অ্যানথ্রপিকের তুলনায় বেশ কয়েকটি বেঞ্চমার্কে অত্যাধুনিক (state-of-the-art) পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।
বাবুশকিনের পটভূমি
xAI প্রতিষ্ঠার আগে, বাবুশকিন গুগল ডিপমাইন্ডে একটি রিসার্চ টিমের সদস্য ছিলেন, যেখানে তিনি ২০১৯ সালে অ্যালফাস্টার (AlphaStar) তৈরিতে কাজ করেন। এই এআই সিস্টেম ভিডিও গেম স্টারক্রাফটে শীর্ষ-র্যাঙ্কড খেলোয়াড়দের পরাজিত করার ক্ষমতা দেখিয়েছিল। এছাড়া, তিনি ওপেনএআই-তে গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) রিলিজের আগের বছরগুলোতে।
তার পোস্টে, বাবুশকিন xAI গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, শিল্পের অভিজ্ঞরা xAI-এর মেমফিস, টেনেসি-তে তিন মাসের মধ্যে একটি সুপারকম্পিউটার তৈরির লক্ষ্যকে “অসম্ভব” বলে অভিহিত করেছিলেন। তবুও, xAI রেকর্ড সময়ে এই সুপারকম্পিউটার তৈরি করতে সক্ষম হয়। তবে, পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে ক্লাস্টারটির জন্য ব্যবহৃত অস্থায়ী গ্যাস টারবাইনগুলো প্রতিবেশী সম্প্রদায়গুলোতে নির্গমন (emissions) ছড়াচ্ছে এবং তাদের দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইলন মাস্কের কাছ থেকে শিক্ষা
বাবুশকিন বলেন, তিনি xAI-এ তার সময়কে স্নেহের সাথে স্মরণ করেন, “যেন একজন গর্বিত বাবা-মা, যিনি তাদের সন্তানকে কলেজে পাঠিয়ে গাড়ি চালিয়ে ফিরছেন।” তিনি ইলন মাস্কের কাছ থেকে দুটি মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন: “১. প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধানে নিজে হাতে কাজ করতে ভয় পাবেন না, ২. তীব্র তাগিদের সাথে কাজ করুন।”
xAI-এর ভবিষ্যৎ ও বাবুশকিনের নতুন পথ
বাবুশকিনের প্রস্থান xAI-এর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, বিশেষ করে যখন কোম্পানিটি তার এআই মডেলগুলোর নিরাপত্তা ও নৈতিকতা নিয়ে সমালোচনার মুখে। তবে, তার নতুন উদ্যোগ ‘বাবুশকিন ভেঞ্চারস’ এআই নিরাপত্তা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, এই ধরনের উদ্যোগ নিরাপদ ও দায়িত্বশীল এআই ডেভেলপমেন্টের গুরুত্ব তুলে ধরে। বাবুশকিনের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্যও অনুপ্রেরণা হতে পারে, যারা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চান।
xAI এখনও তার মিশন চালিয়ে যাচ্ছে, তবে বাবুশকিনের মতো একজন মূল ব্যক্তিত্বের প্রস্থান কোম্পানির ভবিষ্যৎ কৌশল এবং পাবলিক ইমেজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য, এই গল্পটি এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই তুলে ধরে—একদিকে এটি মানবতার উন্নতির জন্য অসাধারণ সুযোগ তৈরি করছে, অন্যদিকে নিরাপত্তা ও নৈতিকতার প্রশ্নগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।