ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যাপল (Apple) তার পুনরুদ্ধারিত সিরি (Siri) ভার্সন চালানোর জন্য গুগলের জেমিনি (Gemini) এআই মডেল ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছে। দুই কোম্পানি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা খুঁজছে, এবং গুগল অ্যাপলের সার্ভারে চলতে পারে এমন জেমিনির একটি ভার্সন ট্রেনিং দিচ্ছে। আইফোন নির্মাতা এর আগে ওপেনএআই (OpenAI) এবং অ্যান্থ্রপিক (Anthropic)-এর সঙ্গে অনুরূপ অংশীদারিত্বের কথা বিবেচনা করেছিল বলে রিপোর্ট হয়েছে।
ব্লুমবার্গ লিখেছে, “কোম্পানিটি একই সঙ্গে নতুন সিরির দুটি ভার্সন তৈরি করছে: একটি লিনউড (Linwood) নামে, যা তার নিজস্ব মডেল দিয়ে চালিত, এবং অন্যটি গ্লেনউড (Glenwood) নামে, যা বাইরের প্রযুক্তির উপর চলে।” অ্যাপল শেষ পর্যন্ত কোন এআই মডেল ব্যবহার করবে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, কিন্তু সম্ভবত তারা নিজেদের তৈরি মডেলের সঙ্গেই থাকতে পারে।
একটি সম্ভাব্য মূল প্রযুক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীকে হস্তান্তর করা অ্যাপলের মতো কোম্পানির জন্য অদ্ভুত মনে হলেও, এটি অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স (Apple Intelligence) চালু করার কতটা অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছে তার প্রমাণ। অ্যাপল তার নতুন এআই ফিচারগুলোর অধিকাংশ আইওএস ১৮ (iOS 18)-এর রিলিজে অন্তর্ভুক্ত করেছে, কিন্তু ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবহার করে অ্যাপে অ্যাকশন নেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সিরির আপডেটটি পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। অ্যাপল শেষ পর্যন্ত মার্চ মাসে সিরি আপডেট বিলম্বিত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে, এবং নতুন লঞ্চ এখন ২০২৬ সালের কোনো সময়ে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই বিলম্বের ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা অ্যাপলের বিভিন্ন এআই প্রজেক্টকে অভ্যন্তরীণভাবে হস্তান্তরিত করতে বাধ্য করেছে, এবং তৃতীয় পক্ষের এআই মডেল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পিক্সেল ১০ (Pixel 10)-এর লঞ্চের পর থেকে জেমিনি এখন নতুন সিরির জন্য অ্যাপলের প্রতিশ্রুত ক্ষমতাগুলোর অনুরূপ সেট অফার করছে। সঠিক পরিবর্তনের সঙ্গে এটি আইওএসে একই কাজ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যাপলের হার্ডওয়্যার এবং সার্ভারে চলতে পারে এমন জেমিনির একটি ভার্সন ব্যবহার করা—যাকে কোম্পানি প্রাইভেট ক্লাউড কম্পিউট (Private Cloud Compute) বলে—আরও একটি স্তরের নিরাপত্তা যোগ করতে পারে।
অ্যাপল জেমিনিকে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)-এর বিকল্প হিসেবে অফার করার পরিকল্পনা করেছিল বলে রিপোর্ট হয়েছে, কিন্তু এই অপশন এখনও চালু হয়নি। তার এআই ফিচারগুলোর কিছু অংশে জেমিনি ব্যবহার করলে অ্যাপল স্যামসাং-এর মতো অবস্থানে পৌঁছবে, যার গ্যালাক্সি এআই (Galaxy AI) কাস্টম মডেল এবং জেমিনির মিশ্রণের উপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই খবরটি আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে আইফোনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, এবং সিরির মতো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করে—যেমন বাংলা কমান্ড দিয়ে নেভিগেশন বা রিমাইন্ডার সেট করা। যদি অ্যাপল জেমিনির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে, তাহলে সিরি আরও স্মার্ট এবং নিরাপদ হবে, যা বাংলাদেশের তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। তবে এই বিলম্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এআই উন্নয়নে বড় কোম্পানিগুলোও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়—স্থানীয় ডেভেলপারদের জন্য এটি একটি শিক্ষা, যাতে আমরাও নিজেদের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে এগিয়ে যাই।