যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (FTC) প্রধান অ্যান্ড্রু ফার্গুসন, যিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক নিযুক্ত, সম্প্রতি গুগলের জিমেইল (Gmail) সেবার স্প্যাম ফিল্টার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে জিমেইলের ফিল্টার ব্যবস্থা রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক (partisan) প্রভাব ফেলছে।
ফার্গুসন গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) সুন্দর পিচাইকে লেখা একটি চিঠিতে এই বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন, যেখানে টার্গেটেড ভিক্টরি নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের কথা বলা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি (RNC) এবং এলন মাস্কের এক্স (X) প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে কাজ করেছে। তারা দাবি করেছে যে জিমেইল রিপাবলিকানদের তহবিল সংগ্রহের প্ল্যাটফর্ম উইনরেড (WinRed)-এর লিঙ্কযুক্ত ইমেইলগুলোকে স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করছে, কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের তহবিল সংগ্রহের প্ল্যাটফর্ম অ্যাক্টব্লু (ActBlue)-এর লিঙ্কযুক্ত ইমেইলগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি করছে না।
ফার্গুসন তার চিঠিতে লিখেছেন, “সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে আমার ধারণা, জিমেইলের স্প্যাম ফিল্টারগুলো রিপাবলিকান প্রেরকদের ইমেইলগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয়, কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের একই ধরনের ইমেইলগুলোর ক্ষেত্রে তা করে না।” তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি জিমেইলের ফিল্টার ব্যবস্থা আমেরিকানদের তাদের পছন্দের বক্তব্য (speech) গ্রহণ বা তাদের ইচ্ছামতো দান করার স্বাধীনতায় বাধা দেয়, তবে এটি আমেরিকান গ্রাহকদের ক্ষতি করতে পারে এবং এফটিসি আইনের (FTC Act) ‘অন্যায্য বা প্রতারণামূলক বাণিজ্যিক আচরণ’ নিষিদ্ধকরণ লঙ্ঘন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, এটি এফটিসির তদন্ত এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
জবাবে, গুগলের একজন মুখপাত্র অ্যাক্সিওসকে (Axios) বলেন, জিমেইলের স্প্যাম ফিল্টারগুলো বিভিন্ন নিরপেক্ষ সংকেত (objective signals) বিবেচনা করে কাজ করে, যেমন—ব্যবহারকারীরা কোনো নির্দিষ্ট ইমেইলকে স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কিনা, বা কোনো বিজ্ঞাপন সংস্থা প্রচুর পরিমাণে ইমেইল পাঠাচ্ছে যা প্রায়ই স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত হয়। তারা জানান, এই নীতি সব প্রেরকের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়, রাজনৈতিক মতাদর্শ (political ideology) নির্বিশেষে। মুখপাত্র আরও বলেন, “আমরা এই চিঠি পর্যালোচনা করব এবং গঠনমূলকভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য প্রতীক্ষায় আছি।”
কনজারভেটিভরা প্রায়ই অভিযোগ করেন যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো, যার মধ্যে জিমেইলও রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সেন্সরশিপ (censorship) বা অন্যায্য আচরণ করছে। ২০২৩ সালে, ফেডারেল ইলেকশন কমিশন (FEC) জিমেইলের স্প্যাম ফিল্টার নিয়ে রিপাবলিকানদের একটি অভিযোগ খারিজ করে দেয়। এছাড়া, একটি ফেডারেল আদালতও আরএনসি’র (RNC) অনুরূপ অভিযোগের একটি মামলা খারিজ করে। তবে, আরএনসি এই মামলাটি পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছে।
এই মাসের শুরুতে, একটি ফেডারেল বিচারক এফটিসির একটি তদন্ত বন্ধ করে দেন, যেটি বামপন্থী গ্রুপ মিডিয়া ম্যাটার্সের (Media Matters) বিরুদ্ধে ছিল। মিডিয়া ম্যাটার্স এক্স প্ল্যাটফর্মে ইহুদি-বিদ্বেষী (antisemitic) কনটেন্ট নিয়ে গবেষণা করেছিল। বিচারক এই তদন্তকে “প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ” (retaliatory act) হিসেবে বর্ণনা করেন।
এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরপেক্ষতা এবং ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে। আমরা যখন ডিজিটাল সেবার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি, তখন এই ধরনের অভিযোগগুলো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে।