শনিবার মাইক্রোসফট (Microsoft) জানিয়েছে যে, লেহিত সাগরে (Red Sea) একাধিক আন্ডারসি কেবল কাটার কারণে তাদের অ্যাজুর (Azure) ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের ক্লায়েন্টরা লেটেন্সি বা বিলম্বের সমস্যায় পড়তে পারেন। ব্লুমবার্গের (Bloomberg) রিপোর্ট অনুসারে, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে যাওয়া বা এশিয়া ও ইউরোপে শেষ হওয়া ট্রাফিককে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু কেবল কে কাটলো বা কেন, সেটা নিয়ে মাইক্রোসফট কিছু বলেনি।
কোম্পানির স্ট্যাটাস আপডেটে বলা হয়েছে, “আন্ডারসি ফাইবার কাটা মেরামত করতে সময় লাগে। তাই আমরা ক্রমাগত মনিটরিং করব, রুটিং পুনর্বিন্যাস করব এবং অপটিমাইজ করব যাতে কাস্টমারদের উপর প্রভাব কম থাকে।” শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই মাইক্রোসফট জানিয়েছে যে, আর কোনো অ্যাজুর সমস্যা ধরা পড়ছে না। তবে এই ঘটনা শুধু অ্যাজুরকেই প্রভাবিত করেনি। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লকস (NetBlocks) রিপোর্ট করেছে যে, লেহিত সাগরে সিরিজের মতো সাবসি কেবল আউটেজের ফলে ভারত, পাকিস্তানসহ একাধিক দেশের ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি খারাপ হয়েছে।
লেহিত সাগরের এই কেবলগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
লেহিত সাগর হলো বিশ্বের ইন্টারনেট ট্রাফিকের একটা বড় চোকপয়েন্ট। এশিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়া প্রায় ১৭% ইন্টারনেট ডেটা এই পথ দিয়ে যায়। রয়টার্সের (Reuters) রিপোর্ট অনুসারে, সৌদি আরবের জেদ্দাহ (Jeddah) এর কাছে এই কেবলগুলো কাটার ফলে ইউএই-এর এটিসালাত (Etisalat) এবং ডু (Du) নেটওয়ার্কেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাইক্রোসফট বলেছে, তারা অলটারনেটিভ নেটওয়ার্ক পাথ দিয়ে ট্রাফিক রিরুট করেছে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে যাওয়া কিছু ট্রাফিকে এখনও লেটেন্সি বেশি হচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)-এর মতে, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা (Houthi rebels) আগে লেহিত সাগরে এই কেবলগুলোতে হামলা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এটা ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টির অংশ নয়। তবে এই অঞ্চলে চলমান উত্তেজনা—ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রভাবে—কেবল কাটার পিছনে সন্দেহের চোখে তাকানো হচ্ছে হুথিদের দিকে। আল জাজিরা (Al Jazeera)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কেবলগুলোতে ক্ষতি হলে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইউএই এবং ভারতে ইন্টারনেট স্পিড কমে যাবে এবং অ্যাক্সেস অস্থির হবে।
বাংলাদেশের জন্য কী অর্থ?
বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা গ্লোবাল ইন্টারনেটে অনেকটা নির্ভরশীল, এই ঘটনা থেকে প্রভাবিত হতে পারে। আমাদের অনেক ট্রাফিক এশিয়া-ইউরোপ রুট দিয়ে যায়, যা লেহিত সাগরের উপর নির্ভর করে। যদি এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অনলাইন ব্যবসা, ক্লাউড সার্ভিস এবং এমনকি আইটি এক্সপোর্টে বাধা পড়তে পারে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) এর মতো সংস্থাগুলোকে এখনই অলটারনেটিভ রুটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। পূর্বের ঘটনায় দেখা গেছে, এমন কেবল কাটায় দিনের পর দিন সমস্যা চলতে পারে।
মেরামতের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
আন্ডারসি কেবল মেরামত করা সহজ নয়। এতে বিশেষ জাহাজ এবং ক্রু লাগে, যা কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। টেকক্রাঞ্চ (TechCrunch)-এর মতে, মাইক্রোসফটের ইঞ্জিনিয়াররা ইতিমধ্যে রিরুটিং করে সমস্যা কমিয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এই অঞ্চলে হুথি হামলার ঝুঁকিতে মেরামতি জাহাজ পাঠানোও কঠিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বিশ্বের ডিজিটাল অবকাঠামোর দুর্বলতা তুলে ধরেছে। স্যাটেলাইট কানেকশন যেমন স্টারলিঙ্ক (Starlink) এখন বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে পারে, কিন্তু সেটাও সবার জন্য সস্তা নয়।
উপসংহার
লেহিত সাগরের এই কেবল কাটা শুধু মাইক্রোসফট অ্যাজুরের জন্য নয়, বিশ্বের ইন্টারনেটের জন্য একটা সতর্কতা। যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যে এমন অবকাঠামো কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটা স্মারক—ডিজিটাল নির্ভরতা কমাতে হবে এবং বিকল্প প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে। যুদ্ধের ছায়ায় ইন্টারনেটের এই ‘অদৃশ্য’ লাইনগুলো কতটা ভঙ্গুর, তা এখন স্পষ্ট।