কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শিল্পে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হওয়ার মধ্যে অ্যানথ্রপিক ওপেনএআই-এর ক্লদ এআই মডেল পরিবারের অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিয়েছে। ওয়ার্ডের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওপেনএআই তাদের অভ্যন্তরীণ সরঞ্জামগুলোতে ক্লদকে সংযুক্ত করে এর কার্যকারিতা তাদের নিজস্ব মডেলের সঙ্গে তুলনা করছিল, বিশেষ করে কোডিং, লেখা এবং নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে।
অ্যানথ্রপিকের একজন মুখপাত্র টেকক্রাঞ্চকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, “ওপেনএআই-এর নিজস্ব প্রযুক্তিগত দল জিপিটি-৫ লঞ্চের আগে আমাদের কোডিং সরঞ্জাম ব্যবহার করছিল, যা আমাদের সেবার শর্তের সরাসরি লঙ্ঘন।” অ্যানথ্রপিকের বাণিজ্যিক শর্ত অনুযায়ী, গ্রাহকরা ক্লদ ব্যবহার করে প্রতিযোগী পণ্য বা সেবা তৈরি করতে পারবে না, যার মধ্যে প্রতিযোগী এআই মডেল প্রশিক্ষণ বা রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং অন্তর্ভুক্ত।
তবে, অ্যানথ্রপিক জানিয়েছে, তারা ওপেনএআই-কে “বেঞ্চমার্কিং এবং নিরাপত্তা মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে” অ্যাক্সেস প্রদান অব্যাহত রাখবে। এদিকে, ওপেনএআই-এর মুখপাত্র হান্না ওং এক বিবৃতিতে বলেছেন, “অন্য এআই সিস্টেম মূল্যায়ন করা শিল্পের মানসম্মত অনুশীলন এবং আমাদের উন্নতি ও নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। আমরা অ্যানথ্রপিকের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করি, তবে এটি হতাশাজনক কারণ আমাদের এপিআই তাদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।”
এই ঘটনা অ্যানথ্রপিকের প্রতিযোগীদের প্রতি কঠোর অবস্থানেরই ইঙ্গিত দেয়। এর আগে, গত মাসে অ্যানথ্রপিক এআই কোডিং স্টার্টআপ উইন্ডসার্ফের অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়, যখন শোনা যায় যে ওপেনএআই এটি অধিগ্রহণ করতে পারে। অ্যানথ্রপিকের প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা জ্যারেড কাপলান তখন টেকক্রাঞ্চকে বলেছিলেন, “ওপেনএআই-এর কাছে ক্লদ বিক্রি করা অদ্ভুত হবে।”
এই পদক্ষেপটি এআই শিল্পে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তি সুরক্ষার প্রতি কোম্পানিগুলোর কঠোর মনোভাবকে তুলে ধরে। ওপেনএআই তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মডেল জিপিটি-৫ প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা কোডিংয়ে উন্নত ক্ষমতা প্রদর্শন করবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। অ্যানথ্রপিকের এই পদক্ষেপ ওপেনএআই-এর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ তারা এখন ক্লদের পরিবর্তে নিজস্ব সরঞ্জাম বা গুগলের জেমিনি বা মেটার লামার মতো বিকল্প প্রদানকারীর উপর নির্ভর করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি এআই শিল্পে প্রতিযোগিতা এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তির সুরক্ষার গতিশীলতাকে তুলে ধরে। বাংলাদেশে এআই গবেষণা এবং স্টার্টআপগুলো ক্রমশ বাড়ছে, এবং এই ধরনের ঘটনা স্থানীয় ডেভেলপারদের জন্য শিক্ষণীয়। অ্যানথ্রপিকের মতো কোম্পানির কঠোর শর্তাবলী এবং প্রতিযোগীদের প্রতি তাদের নীতি বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোর জন্য এপিআই অ্যাক্সেস এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে সতর্কতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশের ডেভেলপাররা, যারা ক্লদ বা চ্যাটজিপিটির মতো মডেল ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে, তাদের এই ধরনের শর্তাবলী মেনে চলতে হবে, যাতে তাদের প্রকল্প বাধাগ্রস্ত না হয়।
এছাড়া, এই বিতর্ক এআই শিল্পে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে এআই শিক্ষা ও গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এই ধরনের ঘটনা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তি সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করতে পারে। তবে, এটি স্থানীয় স্টার্টআপগুলোর জন্য বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরতা কমানোর প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করে। অ্যানথ্রপিক ও ওপেনএআই-এর এই দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের তরুণ এআই উদ্ভাবকদের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে, যাতে তারা তাদের প্রযুক্তি বিকাশের সময় শর্তাবলী এবং প্রতিযোগিতামূলক গতিশীলতার প্রতি সতর্ক থাকে।
উপসংহার
অ্যানথ্রপিকের ওপেনএআই-এর ক্লদ এপিআই অ্যাক্সেস বন্ধের সিদ্ধান্ত এআই শিল্পে প্রতিযোগিতা এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তি সুরক্ষার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। জিপিটি-৫-এর আসন্ন প্রকাশের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ ওপেনএআই-এর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের এআই সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি শিক্ষা এবং সুযোগ উভয়ই, যা স্থানীয় উদ্ভাবন এবং নীতিমালা মেনে চলার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এই ঘটনা এআই শিল্পের ভবিষ্যৎ গতিপথ এবং সহযোগিতার গতিশীলতার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।