বায়োশক ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ। বহু প্রতীক্ষিত বায়োশক ৪-এর উন্নয়ন প্রক্রিয়া বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছে, এবং মূল বায়োশক গেমের একটি রিমেক প্রকল্পও এ বছরের শুরুতে স্থগিত করা হয়েছে। ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২কে গেমসের নির্বাহীদের সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় ক্লাউড চেম্বার স্টুডিওর তৈরি বায়োশক ৪ গেমটি ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাহীরা গেমের গল্প বা ন্যারেটিভের উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন, যা আগামী মাসগুলোতে “ওভারহল” বা বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে।
২কে গেমস ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের কাছে এখন একটি ভালো গেম রয়েছে, কিন্তু আমরা একটি দুর্দান্ত গেম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বায়োশক সিরিজের চতুর্থ কিস্তি হিসেবে এই গেমটির পূর্বসূরি বায়োশক ইনফিনিট (২০১৩) ছিল একটি ব্যাপক সফল গেম, যা ডিজাইন, গেমপ্লে, গল্প এবং সাউন্ডট্র্যাকের জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছিল। তবে, এই নতুন উন্নয়ন বাধা এবং স্টুডিওর নেতৃত্বে পরিবর্তন ভক্তদের অপেক্ষার সময় আরও দীর্ঘ করছে।
ক্লাউড চেম্বারের স্টুডিও প্রধান কেলি গিলমোরকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হোগার্থ দে লা প্লান্টেকে প্রকাশনা-কেন্দ্রিক ভূমিকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো গেমের বর্তমান অবস্থার প্রতি ২কে গেমসের অসন্তুষ্টির ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া, সাম্প্রতিক একটি সর্বস্তরের সভায় ক্লাউড চেম্বারের কর্মীদের বলা হয়েছে যে স্টুডিওকে “আরও চটজলদি এবং দক্ষ” হতে হবে, যা ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বায়োশক ৪-এর উন্নয়ন শুধুমাত্র এই সিরিজের একমাত্র সমস্যা নয়। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ২০০৭ সালে প্রকাশিত মূল বায়োশক গেমের একটি পূর্ণাঙ্গ রিমেক প্রকল্প এ বছরের শুরুতে ২কে গেমস কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে। মূল গেমটি, যা খেলোয়াড়দের র্যাপচার নামক ডিস্টোপিয়ান পানির নিচের শহরে নিয়ে গিয়েছিল, একটি যুগান্তকারী হিট ছিল। ২০১৬ সালে বায়োশক: দ্য কালেকশন-এর অংশ হিসেবে এটির একটি রিমাস্টার সংস্করণ প্রকাশিত হয়, যা ১০৮০পি রেজোলিউশন এবং উচ্চ ফ্রেম রেট সমর্থন করেছিল। তবে, ভক্তরা আধুনিক গ্রাফিক্সের সঙ্গে র্যাপচারের একটি সম্পূর্ণ নতুন রিমেকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে।
বায়োশক ৪-এর উন্নয়ন ২০১৯ সালে ক্লাউড চেম্বার স্টুডিওর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছিল। ছয় বছর পরেও গেমটি প্রকাশের কাছাকাছি নেই, এবং কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, এটি ২০১৫ সাল থেকেই বিভিন্ন স্টুডিওর মাধ্যমে উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। গেমটির সেটিং সম্পর্কে গুজব রয়েছে যে এটি ১৯৬০-এর দশকের অ্যান্টার্কটিকার একটি কাল্পনিক শহর ‘বোরিয়ালিস’-এ সেট করা হতে পারে, এবং এটি একটি ওপেন-ওয়ার্ল্ড ফরম্যাটে তৈরি হতে পারে। তবে, এই তথ্যগুলো এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
বায়োশক সিরিজটি ৪৩ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি করে গেমিং জগতের অন্যতম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে, ২০১৩ সালে বায়োশক ইনফিনিট প্রকাশের পর থেকে নতুন কোনো গেম আসেনি। ভক্তরা র্যাপচার বা কলাম্বিয়ার মতো আইকনিক সেটিং-এ ফিরে যাওয়ার বা একটি নতুন শহর আবিষ্কারের আশায় রয়েছেন। কিন্তু বর্তমান উন্নয়ন সমস্যা এবং নেতৃত্বের পরিবর্তনের কারণে, বায়োশক ৪-এর জন্য অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হতে পারে। এছাড়া, নেটফ্লিক্সে বায়োশক মুভির কাজ চলছে, যা ভক্তদের জন্য কিছুটা সান্ত্বনা হতে পারে, তবে এটি বায়োশক ৪-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নাও হতে পারে।
বাংলাদেশের গেমারদের জন্য এই খবর হতাশাজনক হতে পারে, কারণ বায়োশক সিরিজ তার গভীর গল্প, দার্শনিক থিম এবং অসাধারণ বিশ্ব-নির্মাণের জন্য বিখ্যাত। ২কে গেমসের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, গেমটির ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। ভক্তরা আশা করছেন যে এই ওভারহল এবং নতুন নেতৃত্ব গেমটিকে সিরিজের উচ্চ মানের সঙ্গে মেলাতে সক্ষম হবে। তবে, ২০২৮-২০২৯ সালের আগে গেমটির প্রকাশের সম্ভাবনা কম, যা এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য একটি দীর্ঘ অপেক্ষার ইঙ্গিত দেয়।