ডলবি (Dolby) সম্প্রতি তাদের জনপ্রিয় ডলবি ভিশন এইচডিআর (HDR) ফরম্যাটের উত্তরসূরি ডলবি ভিশন ২ (Dolby Vision 2)-এর ফিচার ঘোষণা করেছে। যেখানে মূল ডলবি ভিশন নির্মাতাদের টিভিতে কনটেন্টের উপস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট সুযোগ দিয়েছিল, সেখানে ডলবি ভিশন ২ এই সুবিধাকে আরও প্রসারিত করছে। এবার এটি শুধু ছবির গুণগত মানই নয়, মোশন হ্যান্ডলিং (motion handling) এবং দর্শকের দেখার পরিবেশের সঙ্গে নির্মাতার উদ্দেশ্যের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করছে। তবে, এই নতুন প্রযুক্তি বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
কনটেন্ট ইন্টেলিজেন্স: ছবি আরও স্পষ্ট, যেকোনো পরিবেশে
ডলবি ভিশন ২-এর একটি প্রধান স্তম্ভ হলো “কনটেন্ট ইন্টেলিজেন্স” (Content Intelligence)। এটি নতুন এআই ক্ষমতা (AI capabilities) ব্যবহার করে টিভির সেন্সর দিয়ে কনটেন্টের উপস্থাপনাকে উন্নত করবে। বিশেষ করে, অনেক দর্শকের অভিযোগ—যে অনেক শো বা সিনেমা অন্ধকার পরিবেশে দেখতে অসুবিধা হয়—তা সমাধানের লক্ষ্যে এই প্রযুক্তি কাজ করবে।
অনেক সম্পাদক ও নির্মাতা তাদের কনটেন্ট অন্ধকার ঘরে উচ্চমানের টিভিতে দেখার জন্য তৈরি করেন, যেখানে উচ্চ উজ্জ্বলতা (peak brightness), কনট্রাস্ট (contrast), এবং রঙের নির্ভুলতা (color accuracy) থাকে। কিন্তু সাধারণ দর্শকের টিভি বা দেখার পরিবেশ এতটা আদর্শ না হওয়ায় কনটেন্ট প্রায়ই অন্ধকার মনে হয়। উদাহরণ হিসেবে, অ্যাপল টিভি প্লাসের (Apple TV+) সাইলো (Silo) বা গেম অফ থ্রোনস-এর শেষ মৌসুমের ব্যাটল অফ উইন্টারফেল (Battle of Winterfell) অনেক দর্শকের কাছে অন্ধকার বলে সমালোচিত হয়েছিল।
ডলবি দাবি করছে, কনটেন্ট ইন্টেলিজেন্স নির্মাতার মূল উদ্দেশ্য অক্ষুণ্ণ রেখে যেকোনো পরিবেশে ছবিকে “ক্রিস্টাল ক্লিয়ার” (crystal clear) করবে। টিভিতে থাকা অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট ডিটেকশন সেন্সর (ambient light detection sensors) দর্শকের ঘরের আলোর মাত্রা বিশ্লেষণ করে কনটেন্টের উপস্থাপনা সামঞ্জস্য করবে। এটি বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিশেষভাবে সুবিধাজনক হতে পারে, যেখানে অনেকে সাধারণ টিভিতে কনটেন্ট দেখেন এবং ঘরের আলোর অবস্থা ভিন্ন হতে পারে।
অথেনটিক মোশন: সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা নাকি বিতর্কের নতুন কারণ?
ডলবি ভিশন ২-এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য “অথেনটিক মোশন” (Authentic Motion) নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হতে পারে। ডলবি এটিকে “বিশ্বের প্রথম ক্রিয়েটিভ ড্রিভেন মোশন কন্ট্রোল টুল” হিসেবে দাবি করছে, যা প্রতিটি দৃশ্যে (scene-by-scene) জাডার (judder) কমিয়ে সিনেমাটিক অভিজ্ঞতাকে আরও খাঁটি করবে।
কয়েক বছর আগে থেকে টিভি নির্মাতারা মোশন স্মুদিং (motion smoothing) বা “সোপ অপেরা ইফেক্ট” (soap opera effect) নামে একটি ফিচার যুক্ত করেছে। এটি কনটেন্টের ফ্রেম রেট (frame rate) বাড়িয়ে (যেমন, ২৪ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ডের পরিবর্তে ৬০ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ড) এবং ৬০ হার্জ ডিসপ্লের জন্য জাডার সামঞ্জস্য করে। অনেক সাধারণ দর্শক এটি পছন্দ করলেও, সিনেমা প্রেমীরা এটিকে ঘৃণা করেন। এর ফলে সিনেমাটিক কনটেন্ট হোম ভিডিওর মতো দেখায় এবং আর্টিফ্যাক্ট (artifacts) তৈরি হয়। অনেক নির্মাতাও এর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কারণ এটি তাদের শৈল্পিক উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।
ডলবি দাবি করছে, অথেনটিক মোশন নির্মাতাদের দৃশ্যভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ দেবে, যাতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কখন এবং কতটা মোশন স্মুদিং ব্যবহার হবে। তবে, এটি বর্তমান মোশন স্মুদিং থেকে কতটা আলাদা হবে? আর্টিফ্যাক্ট সমস্যার সমাধান কীভাবে করবে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।
কবে আসছে এবং কারা সমর্থন করছে?
ডলবি ভিশন ২-এর সম্পূর্ণ চিত্র জানতে জানুয়ারিতে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো (Consumer Electronics Show) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ডলবি ঘোষণা করেছে যে হিসেন্স (Hisense) তাদের নতুন টিভিতে এই প্রযুক্তি সমর্থন করবে এবং কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে ক্যানাল প্লাস (CANAL+) এটি ব্যবহার করবে। এটি দুটি স্তরে পাওয়া যাবে: সাধারণ ও মধ্যমানের টিভির জন্য ডলবি ভিশন ২ এবং উচ্চমানের টিভির জন্য ডলবি ভিশন ২ ম্যাক্স (Dolby Vision 2 Max)। তবে এই দুই স্তরের মধ্যে পার্থক্য এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। লঞ্চের তারিখও এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য এর অর্থ কী?
বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য ডলবি ভিশন ২ আকর্ষণীয় হতে পারে, কারণ এটি সাধারণ টিভি এবং বিভিন্ন আলোর পরিবেশেও উন্নত ছবির গুণমান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে, মোশন স্মুদিং নিয়ে বিতর্ক এবং এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে সিনেমা প্রেমীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের বাজারে কবে আসবে এবং কতটা জনপ্রিয় হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
ডলবি ভিশন ২ কি টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, নাকি বিতর্কের নতুন ঝড় তুলবে? আপনি কী মনে করেন?