ড্রিবল, ডিজিটাল ডিজাইনারদের জন্য একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম, সম্প্রতি তার নীতি পরিবর্তনের জেরে বেশ কয়েকজন ডিজাইনারকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন সান ফ্রান্সিসকোর মিলকিনসাইড ডিজাইন স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা গ্লেব কুজনেতসভ, যিনি প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম পরিচিত মুখ। তার ২১ কোটির বেশি ফলোয়ার সহ অ্যাকাউন্টটি মুহূর্তের মধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে, কারণ তিনি নতুন নিয়ম ভঙ্গ করে সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের সাথে তার যোগাযোগের তথ্য শেয়ার করেছিলেন।
গ্লেব তার হতাশা প্রকাশ করে এক্স-এ লিখেছেন, “আমি প্রতি মাসে ১ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে এসেছি। ১৫ বছরের কাজ, ১২,০০০-এর বেশি শট। একজন ক্লায়েন্ট আমার ইমেইল চাওয়ায় সব মুছে ফেলা হলো। একটি সতর্কতা। কোনো আপিলের সুযোগ নেই।”
ড্রিবলের এই পরিবর্তনের প্রতিবাদে গ্লেব এখন বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলছেন একটি প্রতিযোগী প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য। তিনি বলেন, এটি ড্রিবলের কপি হবে না, বরং ডিজাইনারদের জন্য একটি নতুন ধরনের প্ল্যাটফর্ম হবে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা হবে।
ড্রিবলের মার্কেটপ্লেসে রূপান্তর
গত ১৭ মার্চ, ২০২৫-এ ড্রিবল ঘোষণা করে যে, তাদের ৭ লাখ ৫০ হাজার অনুমোদিত ডিজাইনাররা আর প্ল্যাটফর্মে ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের তথ্য শেয়ার করতে পারবেন না, যতক্ষণ না ক্লায়েন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পেমেন্ট করে। ড্রিবলের দাবি, এই নীতি ডিজাইনারদের অপরিশোধিত পাওনা থেকে রক্ষা করবে এবং প্ল্যাটফর্মের আর্থিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
কিন্তু গ্লেবের মতে, অপরিশোধের সমস্যা খুবই কম, এবং এই নীতি আসলে ড্রিবলের ডিজাইনারদের আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ার একটি কৌশল। গত সেপ্টেম্বর থেকে ড্রিবল একটি মার্কেটপ্লেসে রূপান্তরিত হচ্ছে, যেখানে ডিজাইনাররা ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন এবং ৩.৫% রাজস্ব ভাগ দিতে হয়, অথবা প্রো সাবস্ক্রিপশন কিনে এই ভাগাভাগি এড়াতে পারেন। মার্চে নিয়ম আরও কঠোর হয়, যেখানে ড্রিবলে ক্লায়েন্ট খুঁজলে রাজস্ব ভাগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
ড্রিবলের সিইও কনস্টানটাইন আনাস্তাসাকিস বলেন, “যারা ড্রিবলে ক্লায়েন্ট খুঁজছেন না, শুধু অনুপ্রেরণা বা ফিডব্যাক নিতে চান, তাদের জন্য এই নীতি প্রযোজ্য নয়।” তিনি যোগ করেন, গ্লেব মার্চ থেকে ৮৩টি কাজের অনুসন্ধান পেয়েছিলেন এবং ৬১টির জবাব দিয়েছিলেন। তবে ছয়টি বার্তায় তিনি যোগাযোগের তথ্য শেয়ার করেছেন, যা নিয়ম ভঙ্গের কারণ।
গ্লেবের নতুন উদ্যোগ
গ্লেব ড্রিবলের এই পদক্ষেপে মর্মাহত। তিনি বলেন, তিনি একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছেন, যা ডিজাইনারদের জন্য এআই-চালিত হবে। তিনি মনে করেন, এআই ডিজাইনারদের সৃজনশীলতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং তাদের দক্ষতা বাড়াবে। তিনি বলেন, “এআই ব্যবহার করে আমরা এমন কিছু তৈরি করতে পারি, যা আগে কখনো সম্ভব ছিল না।”
তিনি আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে একটি এমভিপি (মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট) তৈরির পরিকল্পনা করছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, তার লক্ষ্য ড্রিবলকে ধ্বংস করা নয়। “আমি ডিজাইনার হিসেবে সম্প্রদায়ের জন্য কিছু ভালো করতে চাই। ডিজাইনারদের জন্য এই পৃথিবীতে কাজ করা কঠিন, তাই আমাদের সময় ও শ্রমের বিনিয়োগ নিয়ে সতর্ক হতে হবে,” বলেন গ্লেব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্স ডিজাইনারদের জন্য ড্রিবলের মতো প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের বিশ্বব্যাপী ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তবে নতুন নীতি এবং নিষেধাজ্ঞার মতো ঘটনা বাংলাদেশের ডিজাইনারদের জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। গ্লেবের নতুন প্ল্যাটফর্ম এআই-এর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজাইনারদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, যা তাদের দক্ষতা বাড়াতে এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সহায়ক হবে।