ইলন মাস্ক ভাইন আর্কাইভ ফিরিয়ে আনছেন, তবে এআই টুইস্ট সহ

ইলন মাস্ক ভাইনের হারিয়ে যাওয়া ভিডিও আর্কাইভ ফিরিয়ে আনছেন। এক্স-এ পুরোনো ৬-সেকেন্ডের ভিডিও শেয়ার করা যাবে, তবে গ্রক ইমাজিনের সাথে এআই টুইস্ট।

লিখেছেন: - প্রতিবেদক

ইলন মাস্ক সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ভাইনের হারিয়ে যাওয়া ভিডিও আর্কাইভ ফিরিয়ে আনছেন, যা একসময়ের জনপ্রিয় শর্ট-ফর্ম ভিডিও অ্যাপের সম্পূর্ণ সংগ্রহ। টুইটার (বর্তমানে এক্স) ২০১২ সালে ৩০ মিলিয়ন ডলারে ভাইন অধিগ্রহণ করেছিল, কিন্তু ২০১৬ সালে নতুন আপলোড বন্ধ করে দেয় এবং ২০১৭ সালে প্ল্যাটফর্মটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মাস্কের মতে, এক্স-এর কর্মীরা সম্প্রতি এই আর্কাইভটি পুনরুদ্ধার করেছে, যা মনে করা হয়েছিল চিরতরে হারিয়ে গেছে। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “আমরা সম্প্রতি ভাইন ভিডিও আর্কাইভ খুঁজে পেয়েছি (মনে করেছিলাম এটি মুছে ফেলা হয়েছে) এবং ব্যবহারকারীদের অ্যাক্সেস পুনরুদ্ধারে কাজ করছি, যাতে আপনারা চাইলে এগুলো পোস্ট করতে পারেন।”

তবে, এটি ভাইন প্ল্যাটফর্মের পুনর্জন্ম নয়, বরং শুধুমাত্র পুরোনো ভিডিওগুলোর আর্কাইভ ফিরিয়ে আনা। ব্যবহারকারীরা এক্স-এ এই ৬-সেকেন্ডের লুপিং ভিডিওগুলো শেয়ার করতে পারবেন, তবে নতুন ভিডিও তৈরি বা আপলোডের কোনো সুযোগ থাকছে না। মাস্কের এই ঘোষণার সাথে তার নতুন এআই-চালিত ভিডিও তৈরির টুল গ্রক ইমাজিন-এর প্রচারও যুক্ত হয়েছে, যাকে তিনি “এআই ভাইন” হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই টুলটি ব্যবহারকারীদের টেক্সট প্রম্পটের মাধ্যমে শর্ট ভিডিও তৈরি করতে দেয়, যা এক্স প্রিমিয়াম+ সাবস্ক্রাইবারদের জন্য অক্টোবর ২০২৫ থেকে পাওয়া যাবে।

ভাইনের ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

ভাইন ছিল টিকটকের পূর্বসূরি, যেখানে ব্যবহারকারীরা ৬-সেকেন্ডের লুপিং ভিডিও তৈরি করতে পারতেন। ২০১৩ সালে চালু হওয়া এই অ্যাপটি ২০১৫ সাল নাগাদ ২০০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী অর্জন করে এবং শন মেন্ডেস, লোগান পল, কিং ব্যাচ এবং লেলে পন্সের মতো অনেক ইন্টারনেট তারকার ক্যারিয়ারের সূচনা করে। এর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করেছিল, যা ইন্টারনেট মিম সংস্কৃতির একটি বড় অংশ হয়ে ওঠে। তবে, টুইটার ভাইনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় এবং ইনস্টাগ্রাম স্টোরিজ এবং স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতার মুখে ২০১৭ সালে এটি বন্ধ করে দেয়।

যদিও ইউটিউবে ভাইনের জনপ্রিয় ভিডিওগুলোর সংকলন পাওয়া যায়, তবে অনেক ভিডিও হারিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। মাস্কের এই পদক্ষেপ এই হারিয়ে যাওয়া সামগ্রী পুনরুদ্ধার করে নস্টালজিয়া জাগিয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে মিলেনিয়াল এবং জেন জি-দের মধ্যে, যারা ভাইনের সোনালি দিনগুলোর কথা মনে করে।

এআই-চালিত ভবিষ্যৎ এবং সংশয়

মাস্কের ঘোষণায় ভাইনের আর্কাইভ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গ্রক ইমাজিন-এর প্রচারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে তার ফোকাস মানুষের তৈরি কনটেন্টের পরিবর্তে এআই-চালিত ভিডিও তৈরির দিকে। এই “এআই ভাইন” ব্যবহারকারীদের টেক্সট প্রম্পটের মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করতে দেবে, যা ভাইনের মূল সৃজনশীলতার থেকে ভিন্ন। কিছু নেটিজেন এই ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও, অনেকে সংশয়ী, কারণ মাস্কের পূর্বের প্রতিশ্রুতিগুলো সবসময় বাস্তবায়িত হয়নি। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “আমরা টিকটকে থাকছি, ভয় হচ্ছে,” অন্যজন বলেছেন, “ঠিক আছে, আমি তাকে পছন্দ করি না… তবে ২০১৩-এর কনটেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারলে আমি খুশি হব।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য

বাংলাদেশে, যেখানে টিকটক এবং ইউটিউব শর্টসের মতো শর্ট-ফর্ম ভিডিও প্ল্যাটফর্ম তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়, ভাইনের আর্কাইভ ফিরে আসা নস্টালজিয়া জাগাতে পারে এবং কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটররা, যারা ইতিমধ্যে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রাম রিলসে সক্রিয়, এই আর্কাইভ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন। তবে, মাস্কের এআই-চালিত গ্রক ইমাজিনের উপর জোর দেওয়া বাংলাদেশের নির্মাতাদের জন্য একটি শিক্ষা—এআই প্রযুক্তি ক্রমশ কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এটি স্থানীয় ক্রিয়েটরদের এআই টুল ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তবে, ভাইনের পূর্ণাঙ্গ পুনরুজ্জীবন না হওয়ায় কিছু বাংলাদেশী ব্যবহারকারী হতাশ হতে পারেন, যারা হয়তো নতুন ভাইন-স্টাইলের কনটেন্ট তৈরির সুযোগ আশা করেছিলেন।

মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

০%