চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দিয়েছেন ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান। তিনি বলেছেন, এআই অ্যাপটিকে থেরাপি বা মানসিক সহায়তার জন্য ব্যবহার করার আগে দু’বার ভাবতে হবে। কারণ, এআই-এর সঙ্গে সংবেদনশীল কথোপকথনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা সুরক্ষার জন্য এখনও কোনো আইনি কাঠামো তৈরি হয়নি। এআই যখন আপনার ‘ডাক্তার’ বা ‘থেরাপিস্ট’, তখন ডাক্তার-রোগীর গোপনীয়তার মতো কোনো আইনি সুরক্ষা নেই।
সম্প্রতি থিও ভনের পডকাস্ট ‘দিস পাস্ট উইকেন্ড উইথ থিও ভন’-এ এই মন্তব্য করেন অল্টম্যান। এআই এবং আইনি ব্যবস্থার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এআই-এর জন্য এখনও কোনো আইনি বা নীতিগত কাঠামো না থাকায় ব্যবহারকারীদের কথোপকথনের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
অল্টম্যান বলেন, “মানুষ চ্যাটজিপিটির সঙ্গে তাদের জীবনের সবচেয়ে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলে। বিশেষ করে তরুণরা এটিকে থেরাপিস্ট বা লাইফ কোচ হিসেবে ব্যবহার করে। তারা সম্পর্কের সমস্যা নিয়ে পরামর্শ চায়, জিজ্ঞাসা করে ‘আমি কী করব?’ কিন্তু বর্তমানে, আপনি যদি কোনো থেরাপিস্ট, আইনজীবী বা ডাক্তারের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেন, তবে আইনি গোপনীয়তা থাকে। চ্যাটজিপিটির ক্ষেত্রে আমরা এখনও সেই সমাধান বের করতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, এটি মামলার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কারণ, আইনি প্রয়োজনে ওপেনএআই-কে ব্যবহারকারীদের কথোপকথন প্রকাশ করতে হতে পারে।
অল্টম্যান উল্লেখ করেন, “এটা খুবই সমস্যাজনক। আমার মনে হয়, এআই-এর সঙ্গে কথোপকথনের ক্ষেত্রে থেরাপিস্টের মতো একই গোপনীয়তার ধারণা থাকা উচিত। অথচ এক বছর আগেও এই বিষয়ে কেউ ভাবেনি।”
ওপেনএআই বুঝতে পারছে, গোপনীয়তার এই অভাব ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যাপটির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইতিমধ্যে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে একটি মামলায় ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ রয়েছে, যেখানে তাদের বিশ্বব্যাপী শতকোটি চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর কথোপকথন সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে (চ্যাটজিপিটি এন্টারপ্রাইজ গ্রাহকদের বাদে)। ওপেনএআই তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, তারা এই নির্দেশকে ‘অতিরিক্ত দাবি’ হিসেবে বিবেচনা করে এর বিরুদ্ধে আপিল করছে। আদালত যদি ওপেনএআই-এর ডেটা গোপনীয়তার সিদ্ধান্তকে উল্টে দেয়, তবে এটি ভবিষ্যতে আইনি তদন্ত বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য আরও ডেটা দাবির পথ খুলে দিতে পারে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল ডেটা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে, বিশেষ করে যখন আইন কিছু প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনতা, যেমন নারীর প্রজনন অধিকার, সীমিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন সুপ্রিম কোর্ট রো বনাম ওয়েড রায় উল্টে দেয়, তখন অনেকে আরও গোপনীয় পিরিয়ড-ট্র্যাকিং অ্যাপ বা অ্যাপল হেলথে স্থানান্তরিত হয়েছেন, যেখানে তাদের রেকর্ড এনক্রিপ্ট করা থাকে।
পডকাস্টে অল্টম্যান হোস্ট থিও ভনের কাছে তার চ্যাটজিপিটি ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। ভন বলেছিলেন, গোপনীয়তার উদ্বেগের কারণে তিনি এআই চ্যাটবটের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলেন না। অল্টম্যান এতে সম্মতি দিয়ে বলেন, “গোপনীয়তার আইনি স্পষ্টতা না পাওয়া পর্যন্ত চ্যাটজিপিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার আগে সতর্ক থাকা বোধগম্য।”