গুগল এআই মোডকে ডিফল্ট করার পথে, সহজে অ্যাক্সেসের পরিকল্পনাগুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করতে এআই মোডকে সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য করার পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ঐতিহ্যবাহী নীল লিঙ্কের পরিবর্তে এআই মোডকে ডিফল্ট হিসেবে সেট করতে পারবেন। এআই মোড হলো গুগল সার্চের একটি উন্নত সংস্করণ, যা বড় ভাষা মডেল (লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল) ব্যবহার করে ওয়েব থেকে তথ্য সংক্ষিপ্ত করে উপস্থাপন করে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইটে কম সময় ব্যয় করে গুগলেই বেশি তথ্য পান।
এআই মোড কী কী করতে পারে?
গুগলের এআই মোড জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে, ছবি প্রক্রিয়াকরণ করতে, ওয়েবের তথ্য সংক্ষিপ্ত করতে, টেবিল, গ্রাফ, চার্ট তৈরি করতে এবং এমনকি কোডিংয়েও সাহায্য করতে পারে। বর্তমানে এই মোডটি ঐচ্ছিক এবং “সব” ট্যাবের বামে অবস্থিত। ফলে অনেক ব্যবহারকারী ভুলবশত এআই মোডে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে এটি ঐতিহ্যবাহী সার্চের চেয়ে বেশি পছন্দ করতে শুরু করেছেন।
ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা
গুগল এআই স্টুডিওর প্রোডাক্ট লিড লোগান কিলপ্যাট্রিক একটি এক্স পোস্টে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এআই মোড শীঘ্রই গুগল সার্চের ডিফল্ট মোড হতে পারে। তবে, গুগল সার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট রবি স্টেইন স্পষ্ট করেছেন যে, বর্তমানে সবার জন্য এআই মোড ডিফল্ট করার পরিকল্পনা নেই। বরং যারা এআই মোড পছন্দ করেন, তারা একটি টগল বা বোতামের মাধ্যমে এটিকে ডিফল্ট হিসেবে সেট করতে পারবেন। এর ফলে ঐতিহ্যবাহী নীল লিঙ্কগুলো আর ডিফল্ট হিসেবে দেখা যাবে না। তবে, ব্যবহারকারীরা ট্যাব বারের শেষে “ওয়েব” ট্যাবে ক্লিক করে পুরোনো সার্চ ফলাফল দেখতে পারবেন।
ভবিষ্যৎ কী বলছে?
এআই মোড কি ভবিষ্যতে সবার জন্য ডিফল্ট হয়ে যাবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এটি সম্ভব। তবে গুগল এখনও এই পরিবর্তনের প্রভাব তাদের বিজ্ঞাপন ব্যবসার উপর কীভাবে পড়বে তা নিয়ে গবেষণা করছে। বর্তমানে গুগল এআই মোড এবং এআই ওভারভিউতে বিজ্ঞাপন পরীক্ষা করছে এবং বিজ্ঞাপন অংশীদারদের কাছে এআই-ভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচারের প্রস্তাব দিচ্ছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং ও প্রকাশকদের উদ্বেগ
গুগলের সার্চ মার্কেটে প্রায় ৯০% শেয়ার রয়েছে এবং এটি বিশ্বব্যাপী প্রকাশকদের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ক্লিক পাঠায়। কিন্তু এআই মোড সম্পূর্ণরূপে নীল লিঙ্ক প্রতিস্থাপন করলে ডিজিটাল মার্কেটিং শিল্প কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। গুগল দাবি করে যে এআই সারাংশগুলো প্রকাশকদের কাছে “উচ্চমানের” ক্লিক পাঠাবে, কিন্তু এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্য তারা প্রকাশ করেনি।
পিউ-এর একটি স্বাধীন গবেষণায় দেখা গেছে, সার্চ ইঞ্জিনে এআই সারাংশ দেখানো হলে ব্যবহারকারীরা ওয়েব ফলাফলে ক্লিক করার সম্ভাবনা কমে যায়। এটি স্বাধীন প্রকাশক ও ব্লগারদের জন্য একটি অস্তিত্বের সংকট তৈরি করছে। কিছু প্রকাশক এমনকি “নিউজের জন্য ন্যাটো” নামে একটি জোট গঠনের কথা বলছেন, যাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রভাব
সূত্র: পিউ রিসার্চ
বাংলাদেশের ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্যও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা কনটেন্টের প্রকাশকরা গুগলের সার্চ ট্রাফিকের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এআই মোড ডিফল্ট হলে তাদের ওয়েবসাইটে ক্লিক কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, গুগল যদি এআই সারাংশে বাংলা কনটেন্টকে আরও ভালোভাবে প্রাধান্য দেয়, তাহলে এটি বাংলা প্রকাশকদের জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করতে পারে।
উপসংহার
গুগলের এআই মোড সার্চের ভবিষ্যৎ গড়ে দিচ্ছে। ব্যবহারকারীদের জন্য এটি তথ্য পাওয়ার দ্রুত ও সহজ উপায় হলেও, প্রকাশক ও ডিজিটাল মার্কেটারদের জন্য এটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। গুগল কীভাবে তাদের বিজ্ঞাপন মডেল এবং প্রকাশকদের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য রাখবে, তা দেখার বিষয়। বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এখনই এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।