অনরের ম্যাজিক V5 হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই আমার মনে একটা চিন্তা জেগে উঠল—এটা কি সত্যিই টিকে থাকবে? এই অ্যান্ড্রয়েড ফোল্ডেবলের চতুর্থ প্রজন্ম আগের মডেলের চেয়ে খুব বেশি পাতলা না হলেও, অনুভূতিতে তাই মনে হয়। হ্যাঁ, এটি এরোস্পেস-গ্রেড ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি যাতে এর সরুত্ব সত্ত্বেও শক্তিশালী হয়, কিন্তু এটাই প্রথম ফোল্ডেবল যার জন্য আমি অবশ্যই একটা কেস কিনতে বলব—কারণ, ভাই, এটা এতটাই পাতলা যে ভয় লাগে। বাংলাদেশের যারা স্মার্টফোনের নতুন ট্রেন্ড ফলো করে, তাদের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ—যেন একটা পাতলা কাগজের মতো ফোন, কিন্তু ভিতরে শক্তিশালী হার্ডওয়্যার লুকিয়ে আছে।
যদি মনে থাকে, এই সিরিজের শেষ হ্যান্ডসেট ছিল ম্যাজিক V3, এবং না, আপনি ঘুমিয়ে একটা বছর মিস করেননি। চীনা সংস্কৃতিতে নম্বর ফোর খারাপ লাকের প্রতীক, কারণ এর ক্যানটোনিজ ফর্ম (sei) মৃত্যুর শব্দের (séi) সাথে প্রায় একই রকম শোনায়। ফলে, আমরা একটা মডেল নম্বর স্কিপ করেছি। এটা বাঙালি পাঠকদের জন্যও আকর্ষণীয়, কারণ আমাদের সংস্কৃতিতেও কিছু নম্বরের সাথে বিশ্বাস জড়িত, যেমন ১৩ নম্বর।
V5 এতটাই সরু যে আপনার প্যান্টের পকেটে সামান্য জায়গা নেবে, ভাঁজ করলে ৮.৮ মিমি এবং খোললে ৪.১ মিমি পুরু। V3-এর ৯.২ মিমি / ৪.৩৫ মিমির সাথে এটা খুব বেশি পার্থক্য নয়, কিন্তু মনে হয় একটা মাইলফলক পার হয়ে গেছে। উল্লেখ্য যে হোনর এখানে এক চোখ বন্ধ করে নিজেরই পরীক্ষা করছে, কারণ এই পুরুত্ব শুধু সাদা V5-এ সম্ভব। অন্য কালারগুলো (কালো, লাল এবং সোনালি) ৯ মিমি / ৪.২ মিমি, যা স্যামসাং-এর Z ফোল্ড ৭-এর সাথে প্রায় একই। এই পাতলা ডিজাইন বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় ব্যবহারের জন্য আদর্শ, কারণ ভারী ফোন হাতে নিলে ঘামে অস্বস্তি হয়।
স্বাভাবিকভাবেই, একটা প্রিমিয়াম ফোল্ডেবলের জন্য প্রিমিয়াম ইন্টার্নালস দরকার, এবং V5-এ আছে স্ন্যাপড্রাগন ৮ এলিট (Snapdragon 8 Elite) চিপসেট ১৬জিবি র্যাম এবং ৫১২জিবি স্টোরেজ সহ। এর ৫,৮২০mAh সিলিকন কার্বন ব্যাটারি (silicon carbon battery), কোম্পানির সাধারণ এআই পাওয়ার-ম্যানেজমেন্ট টুলসের সাথে জুড়ে, এক চার্জে প্রায় ৫০ ঘণ্টার লাইফ প্রমিস করে। আমি এই দাবির উপর কমেন্ট করব না, কিন্তু বলতে পারি এটা আমার দেখা সবচেয়ে দ্রুত এবং স্ন্যাপি হোনর ফোল্ডেবল। ডিসপ্লে সুইচ করতে কোনো ল্যাগ বা দেরি নেই, এবং সবকিছু মনে হয় আপনি চাইওনি তাও আগেই প্রস্তুত। এই পারফরম্যান্স বাংলাদেশের যুবকদের জন্য আদর্শ, যারা মাল্টিটাস্কিং করে অফিস বা গেমিং করে।
কিন্তু আধুনিক স্মার্টফোনের মতোই, এর বাকি অংশটা ছোটখাটো পরিবর্তনের গল্প। ম্যাজিক V5-এ V3-এর মতোই ৬.৪৩-ইঞ্চি কভার ডিসপ্লে আছে, এবং মেইন স্ক্রিন শুধু সামান্য বেড়েছে, ৭.৯২ ইঞ্চি থেকে ৭.৯৫ ইঞ্চিতে। একমাত্র উপযোগী পরিবর্তন হলো হোনরের ম্যাজিকপেন স্টাইলাস (MagicPen stylus) উভয় স্ক্রিনে সাপোর্ট, কিন্তু এটা অ্যাপল পেন্সিলের (Apple Pencil) মতোই সাইজ, তাই স্টোর করার জায়গা খুঁজতে হবে।
ইমেজিং সেক্টরেও মডেস্ট চেঞ্জের গল্প, V5-এ আছে ৫০-মেগাপিক্সেল f/1.6 প্রাইমারি ক্যামেরা OIS সহ। এটা জুড়ে ৬৪-মেগাপিক্সেল f/2.5 পেরিস্কোপ টেলিফটো (periscope telephoto, OIS সহ) এবং ৫০-মেগাপিক্সেল f/2.0 আল্ট্রা-ওয়াইড। সামগ্রিকভাবে আগের মডেলের চেয়ে উন্নতি, কিন্তু কভার এবং প্রাইমারি ডিসপ্লের উভয় সেলফি ক্যামেরা V3-এর মতোই ২০-মেগাপিক্সেল। অবশ্যই, পারফরম্যান্স বাড়ায় সাধারণ এআই ফিচারগুলো, যা উপযোগী হতে পারে বা না-ও হতে পারে। ফোল্ডেবল ফোনে ক্যামেরা এত ভালো হলে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফাররা খুশি হবে, কারণ এটা সেলফি থেকে জুম পর্যন্ত সব কভার করে।
হোনর ইউরোপিয়ান প্রাইসিং ঘোষণা করেছে V5-এর জন্য, ইইউ-তে €১,৯৯৯ (প্রায় $২,৩১৭) এবং ইউকে-তে £১,৬৯৯ (প্রায় $২,২৮৩)। এটা Z ফোল্ড ৭-এর সাথে একই লেভেলে, যদিও এখনকার দিনে অনেক ডিল এবং ডিসকাউন্ট আছে, তাই খুঁজলে টাকা সেভ করা যায়। আমি এখনও নিশ্চিত নই যে হোনর তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে আরও আক্রমণাত্মকভাবে দাম কমিয়ে নিজেকে ছোট করছে না, কিন্তু মনে হয় তারা বিশ্বাস করে যে স্যামসাং-এর মতো কোম্পানির সাথে সমান মাঠে প্রতিযোগিতা করে জিততে পারবে। বাংলাদেশে আসলে এর দাম কত হবে তা দেখতে হবে, কিন্তু এই ফোল্ডেবলের পাতলা ডিজাইন এবং পাওয়ার আমাদের মতো দেশের টেক-প্রেমীদের জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে—যেন ভবিষ্যতের ফোন আজ হাতে নেওয়া।