ইনস্টাগ্রাম সম্প্রতি তাদের লাইভ সম্প্রচার ফিচারের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে। এখন থেকে, ১,০০০ ফলোয়ারের কম থাকা পাবলিক অ্যাকাউন্টগুলো আর লাইভ সম্প্রচার করতে পারবে না। গত কয়েকদিন ধরে ব্যবহারকারীরা জানাচ্ছেন, তাদের অ্যাকাউন্টে লাইভ সম্প্রচারের বিকল্পটি আর উপলব্ধ নেই। যখন তারা লাইভ শুরু করার চেষ্টা করছেন, তখন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শিত হচ্ছে, যেখানে বলা হয়েছে, “আমরা এই ফিচারটির ব্যবহারের শর্ত পরিবর্তন করেছি। শুধুমাত্র ১,০০০ ফলোয়ার বা তার বেশি থাকা পাবলিক অ্যাকাউন্টগুলো লাইভ ভিডিও তৈরি করতে পারবে।” ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি মেটা এই নতুন নিয়মের বিষয়টি এনগ্যাজেটকে নিশ্চিত করেছে।
মেটা জানিয়েছে, এই নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে যাতে লাইভ সম্প্রচারকারী ক্রিয়েটরদের জন্য সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা যায় এবং ফিচারটির সামগ্রিক ব্যবহারের মান উন্নত হয়। তবে, ১,০০০ ফলোয়ারের কম থাকা ব্যবহারকারীদের কেন এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা তারা দেননি।
মেটা আরও জানিয়েছে, এই নিয়ম শুধু পাবলিক অ্যাকাউন্ট নয়, প্রাইভেট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তবে, প্রাইভেট অ্যাকাউন্টগুলোর জন্য এই পরিবর্তন এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, যে কারণে বিজ্ঞপ্তিতে এখন শুধু পাবলিক অ্যাকাউন্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে ২০২৪ সালে চালু হওয়া একটি ফিচার, যেখানে ব্যবহারকারীরা তিনজন বন্ধুর সঙ্গে লাইভ সম্প্রচার করতে পারতেন, তাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিবর্তন বাংলাদেশের ক্রিয়েটরদের জন্যও একটি বড় ধাক্কা। অনেক নতুন ক্রিয়েটর, যারা এখনও তাদের দর্শক সংখ্যা বাড়াচ্ছেন, তারা লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে তাদের ফলোয়ারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতেন। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার একজন তরুণ ফুড ব্লগার রান্নার টিপস শেয়ার করতে বা চট্টগ্রামের একজন শিক্ষক তাদের ছাত্রদের সঙ্গে লাইভ ক্লাস করতে এই ফিচারটি ব্যবহার করতেন। এই নতুন নিয়মের ফলে তাদের এই সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে, যা তাদের কনটেন্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এই নিয়ম ইনস্টাগ্রামকে টিকটকের সঙ্গে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে, যেখানে লাইভ সম্প্রচারের জন্যও ১,০০০ ফলোয়ার প্রয়োজন। তুলনায়, ইউটিউব অনেক কম শর্ত আরোপ করে, যেখানে মাত্র ৫০ জন সাবস্ক্রাইবার থাকলেই লাইভ সম্প্রচার করা যায়। মেটা এই পরিবর্তনের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না জানালেও, ধারণা করা হচ্ছে যে লাইভ সম্প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় সার্ভার এবং ব্যান্ডউইথ খরচ কমানোর জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কম দর্শকের সম্প্রচারে নিম্নমানের কনটেন্ট বা অপব্যবহার রোধ করাও এর আরেকটি উদ্দেশ্য হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তন বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শিল্পী এবং শিক্ষক লাইভ ফিচারের মাধ্যমে তাদের দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন। উদাহরণস্বরূপ, কুমিল্লা বা সিলেটের কোনো হস্তশিল্পী তাদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য লাইভে এসে ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন। এই নিয়ম তাদের ব্যবসায়িক প্রচারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনেকে এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
এই নতুন নিয়ম ক্রিয়েটরদের উপর আরও বেশি ফলোয়ার সংগ্রহের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কেউ কেউ এমনকি ফলোয়ার কেনার মতো অসৎ পথও বেছে নিতে পারেন, যা প্ল্যাটফর্মের জন্য আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে, ইনস্টাগ্রাম এখনও জানায়নি এই নিয়ম স্থায়ী কিনা। যারা এখনও ১,০০০ ফলোয়ারের মাইলফলক অর্জন করেননি, তাদের জন্য এখন ফলোয়ার বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং স্টোরিজ বা রিলসের মতো অন্যান্য ফিচার ব্যবহার করে দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ইনস্টাগ্রামের এই পদক্ষেপ সোশ্যাল মিডিয়ার গতিশীলতাকে আরও পেশাদার এবং বাণিজ্যিক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে, বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে অনেক ক্রিয়েটর এখনও তাদের যাত্রার শুরুতে রয়েছেন, এই পরিবর্তন তাদের সৃজনশীলতা এবং সম্প্রদায় গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি যদি একজন ক্রিয়েটর হন, তবে এখনই সময় আপনার কনটেন্ট কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবার এবং ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য আরও সক্রিয় হওয়ার।