কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই শুধু তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মডেল জিপিটি-৫ নিয়ে কাজ করছে না, বরং তাদের নামের সার্থকতা রক্ষা করে নতুন ওপেন-ওয়েট মডেল প্রকাশের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এই উদ্যোগটি প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করছে।
এক্স-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ওপেনএআই-এর দুটি নতুন ওপেন-ওয়েট মডেল, “gpt-oss-20b” এবং “gpt-oss-120b”, হাগিংফেস প্ল্যাটফর্মে দেখা গেছে। হাগিংফেস হলো এমন একটি এআই প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন মডেল হোস্ট করা হয়। এই মডেল দুটি সর্বজনীন প্রকাশের আগেই হাগিংফেসে উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বড় ঘোষণার ইঙ্গিত দেয়।
সাধারণত, ওপেনএআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মডেলের ওজন (weights) প্রকাশের আগে অংশীদার সংস্থাগুলোর সঙ্গে শেয়ার করে। এটি প্রকাশের প্রস্তুতির একটি অংশ। ওপেনএআই ইতিমধ্যে হাগিংফেসের মতো বাহ্যিক সংস্থার সঙ্গে এই ওপেন-ওয়েট মডেলগুলো শেয়ার করা শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে এই মডেলগুলো সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ পাবে বলে আশা করা যায়।
ওপেন-ওয়েট মডেল বলতে এমন মডেল বোঝায় যেখানে মডেলের গাণিতিক প্যারামিটার বা ওজনগুলো সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ করা হয়। এটি গবেষক ও ডেভেলপারদের জন্য মডেলটি পরীক্ষা, পরিবর্তন এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। “gpt-oss-20b” এবং “gpt-oss-120b” নামের মধ্যে “20b” এবং “120b” যথাক্রমে ২০ বিলিয়ন এবং ১২০ বিলিয়ন প্যারামিটারের ইঙ্গিত দেয়। এই ধরনের বড় আকারের মডেলগুলো উন্নত প্রসঙ্গ বোঝা, যুক্তি প্রয়োগ এবং টেক্সট উৎপাদনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি উৎসাহী এবং ডেভেলপার সম্প্রদায়ের জন্য ওপেন-ওয়েট মডেলের প্রকাশ নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই মডেলগুলো ব্যবহার করে স্থানীয় অ্যাপ্লিকেশন, বাংলা ভাষার টেক্সট প্রসেসিং, এবং এআই-চালিত সেবা তৈরির ক্ষেত্রে উদ্ভাবন সম্ভব। তবে, এই মডেলগুলোর জন্য উচ্চ কম্পিউটিং ক্ষমতার প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের কিছু ডেভেলপারের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ওপেনএআই-এর এই পদক্ষেপ তাদের পূর্বের “ওপেন” নীতির প্রতি ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। পূর্বে জিপিটি-২-এর মতো মডেল প্রকাশের পর তারা আরও গোপনীয়তার দিকে ঝুঁকেছিল। এখন ওপেন-ওয়েট মডেল প্রকাশের মাধ্যমে তারা গবেষক ও ডেভেলপার সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চাইছে। এটি প্রতিযোগিতামূলক এআই ল্যান্ডস্কেপে মেটা এবং মিস্ট্রালের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি কৌশলও হতে পারে।
আগামী সপ্তাহগুলোতে ওপেনএআই-এর এই মডেলগুলোর প্রকাশ এবং জিপিটি-৫-এর অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী এআই সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হবে। বাংলাদেশের প্রযুক্তি উৎসাহীরা এই উন্নয়নের দিকে নজর রাখতে পারেন, কারণ এটি স্থানীয় পর্যায়ে এআই উদ্ভাবনের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।