স্যাম অল্টম্যানের মার্জ ল্যাবস: নিউরালিঙ্কের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নতুন এআই স্টার্টআপ

স্যাম অল্টম্যানের মার্জ ল্যাবস ৮৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যায়নে নিউরালিঙ্কের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়। ওপেনএআই-এর সমর্থনে নতুন ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস স্টার্টআপ।

লিখেছেন: - প্রতিবেদক

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা স্যাম অল্টম্যান, যিনি ওপেনএআই-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, এবার এলন মাস্কের নিউরালিঙ্কের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছেন। ফাইনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অল্টম্যান একটি নতুন ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) স্টার্টআপ ‘মার্জ ল্যাবস’ সহ-প্রতিষ্ঠা করছেন, যার মূল্যায়ন প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। এই উদ্যোগে ওপেনএআই-এর ভেঞ্চার টিমের কাছ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা চলছে, যদিও টেকক্রাঞ্চের একটি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং ওপেনএআই এখনো পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

মার্জ ল্যাবসের সঙ্গে কাজ করছেন অ্যালেক্স ব্লানিয়া, যিনি অল্টম্যানের আরেকটি উদ্যোগ ‘টুলস ফর হিউম্যানিটি’ (পূর্বে ওয়ার্ল্ড নামে পরিচিত) পরিচালনা করেন। এই প্রকল্পটি চোখের স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল পরিচয় যাচাইয়ের সুবিধা প্রদান করে। মার্জ ল্যাবসের লক্ষ্য হলো উচ্চ-ব্যান্ডউইথের ব্রেন ইমপ্লান্ট তৈরি করা, যা মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করবে। এটি এলন মাস্কের নিউরালিঙ্কের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা করবে, যেটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়নে ৬০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে।

নিউরালিঙ্ক বর্তমানে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে, যাতে তারা চিন্তার মাধ্যমে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই প্রযুক্তি মানুষের সঙ্গে প্রযুক্তির মিথস্ক্রিয়াকে বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে এবং কেউ কেউ এটিকে ‘সিঙ্গুলারিটি’ বা মানুষ ও প্রযুক্তির একীভূতকরণের দিকে একটি পদক্ষেপ বলে মনে করেন। ‘সিঙ্গুলারিটি’ শব্দটি প্রথমে ডিনো বুজ্জাতির ১৯৬০-এর দশকের একটি উপন্যাস থেকে এসেছে, যা মানুষ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনকে বোঝায়। অল্টম্যান ২০১৭ সালে তার ব্লগে ‘দ্য মার্জ’ নিয়ে লিখেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “এই একীভূতকরণ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে, এবং এটি আরো জটিল হবে। আমরা প্রথম প্রজাতি হবো যারা নিজেদের উত্তরসূরি নকশা করবে।”

অল্টম্যান ও মাস্কের মধ্যে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন নয়। তারা একসঙ্গে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু ২০১৮ সালে মাস্ক প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দেন। এরপর থেকে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সম্প্রতি এক্স প্ল্যাটফর্মে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন—অল্টম্যান মাস্কের বিরুদ্ধে এক্স-এর অ্যালগরিদম ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ করেছেন, আর মাস্ক অল্টম্যানকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।

মার্জ ল্যাবসের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো বাকি। তবে এটি স্পষ্ট যে অল্টম্যান মাস্কের নিউরালিঙ্ককে টেক্কা দিতে চান। এই প্রতিযোগিতা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং দুই প্রযুক্তি দৈত্যের ব্যক্তিগত ও দার্শনিক সংঘাতের একটি প্রতিফলন। এই দৌড়ে কে এগিয়ে যাবে, তা সময়ই বলবে, তবে এটি নিশ্চিত যে এই প্রতিযোগিতা ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করবে, যা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের জীবনমান উন্নত করার পাশাপাশি মানুষ ও প্রযুক্তির সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।

ওপেনএআই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।

মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

০%