ফ্লোরিডার একটি আদালত ২০১৯ সালের একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় টেসলার অটোপাইলট স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তিকে আংশিকভাবে দায়ী করেছে। এই রায়ে টেসলাকে ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করতে হবে, এবং এর সঙ্গে আরও শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
টেসলার গাড়িতে অটোপাইলট ফিচারটি সংঘর্ষ সনাক্তকরণ এবং জরুরি ব্রেকিংয়ের মতো কাজে সহায়তা করে। এর আগে অটোপাইলট-সম্পর্কিত দুর্ঘটনায় টেসলা দায় এড়িয়ে এসেছে, তবে ফ্লোরিডার এই মামলায় ফলাফল ভিন্ন হয়েছে। জুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, অটোপাইলট প্রযুক্তির কারণে চালক জর্জ ম্যাকগি রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন, যার ফলে তিনি নাইবেল বেনাভিদেস লিওন এবং ডিলন আঙ্গুলো নামে দুজনের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেন। এতে একজনের মৃত্যু হয় এবং অপরজন গুরুতর আহত হন।
মামলার শুনানিতে টেসলার আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, ম্যাকগি ফোন ধরতে গিয়ে রাস্তা থেকে চোখ সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এবং এটিই দুর্ঘটনার মূল কারণ। তারা বলেন, অটোপাইলটের এখানে কোনো দায় নেই। অন্যদিকে, আঙ্গুলো এবং বেনাভিদেস লিওনের পরিবারের পক্ষে মামলাকারীরা বলেন, টেসলা এবং এর প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক অটোপাইলট ফিচারটিকে অতিরিক্ত নিরাপদ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করেছে। ম্যাকগি আদালতে বলেন, “আমার ধারণা ছিল, এটি আমার কোনো ভুল হলে বা আমি ব্যর্থ হলে আমাকে সহায়তা করবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমার মনে হয় এটি আমাকে ব্যর্থ করেছে।” জুরি দায়ের দুই-তৃতীয়াংশ ম্যাকগির ওপর এবং এক-তৃতীয়াংশ টেসলার ওপর চাপিয়েছে।
টেসলা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মুখপাত্র বলেন, “এই রায় ভুল এবং এটি স্বয়ংচালিত নিরাপত্তার অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। আমরা আপিল করব, কারণ এই মামলায় আইনি ভুল এবং অনিয়ম ঘটেছে। যদিও জুরি চালককে প্রধানত দায়ী করেছে, তবুও প্রমাণ স্পষ্ট যে চালকই পুরোপুরি দায়ী। তিনি দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, অটোপাইলটকে ওভাররাইড করে এক্সিলারেটরে পা দিয়েছিলেন এবং ফোন ধরতে গিয়ে রাস্তা থেকে চোখ সরিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে বা আজকের দিনেও কোনো গাড়ি এই দুর্ঘটনা ঠেকাতে পারত না। এটি অটোপাইলট নিয়ে নয়, বরং বাদীর আইনজীবীদের গড়া একটি কাল্পনিক গল্প।”
২০২৪ সালে ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএইচটিএসএ) অটোপাইলট নিয়ে তদন্ত করে জানায়, দুর্ঘটনার জন্য চালকের ভুল ব্যবহার দায়ী, প্রযুক্তি নয়। তবে তারা আরও বলে, অটোপাইলট অতিরিক্ত উদার ছিল এবং চালকের মনোযোগ রাস্তায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি। এটি ২০১৯ সালের ফ্লোরিডার দুর্ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অটোপাইলট টেসলার স্বয়ংচালিত ফিচারগুলোর একটি অংশ মাত্র। কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গাড়ির সম্পূর্ণ স্বয়ংচালন ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। ইলন মাস্ক দাবি করেছেন, অটোপাইলটের প্রদত্ত আপগ্রেড ফুল সেলফ-ড্রাইভিং (এফএসডি) মানুষের চালনার চেয়ে নিরাপদ। টেসলার রোবোট্যাক্সি সেবাও এফএসডি’র ওপর নির্ভরশীল, যা প্রাথমিক পরীক্ষায় মিশ্র ফলাফল দেখিয়েছে।