টেসলা ইলন মাস্ককে ২৯ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার প্রদান করছে, লক্ষ্য তাকে কোম্পানিতে ফোকাসড রাখা

টেসলা ইলন মাস্ককে ২৯ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার প্রদান করছে যাতে তিনি কোম্পানিতে ফোকাসড থাকেন। ২০১৮ সালের বাতিল হওয়া পে-প্ল্যানের মধ্যে এই পদক্ষেপ।

আনিস আফিফি
লিখেছেন:
আনিস আফিফি
লিখেছেন:আনিস আফিফি
সম্পাদক
আমি আনিস আফিফি — একজন উদ্যোক্তা এবং ওয়েব ডেভেলপার, যার একটি বড় স্বপ্ন হলো মানবজাতির জন্য পৃথিবীকে আরও ভালো একটি জায়গায় পরিণত করা। আমি ব্র্যান্ড তৈরি...
- সম্পাদক
ক্রেডিট: অরিখ লসন / ডানকান হাল / গেটি

টেসলা তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ককে প্রায় ২৯.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৯৬ মিলিয়ন শেয়ারের একটি “অন্তর্বর্তী” পে-প্ল্যান প্রদান করছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো মাস্ককে টেসলায় তার মনোযোগ ধরে রাখা, যখন তার ২০১৮ সালের ৫৬ বিলিয়ন ডলারের পে-প্ল্যানটি আদালতে বাতিল হয়ে আপিলের অপেক্ষায় রয়েছে। টেসলার বোর্ড চেয়ার রবিন ডেনহোম এবং বোর্ড সদস্য ক্যাথলিন উইলসন-থম্পসন শেয়ারহোল্ডারদের কাছে এক চিঠিতে বলেছেন, “ইলনকে ধরে রাখা এখন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অসাধারণ প্রতিভাকে ধরে রাখা এবং উৎসাহিত করা জরুরি, যার শুরু ইলনের মাধ্যমে।”

মাস্কের অন্যান্য ব্যবসা এবং টেসলার উদ্দেশ্য

ইলন মাস্ক একাধিক ব্যবসায়িক উদ্যোগে জড়িত, যার মধ্যে রয়েছে এক্সএআই, স্পেসএক্স, নিউরালিঙ্ক, এক্স কর্পোরেশন এবং দ্য বোরিং কোম্পানি। তিনি সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও সময় দিয়েছেন, যার মধ্যে ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন প্রচারে সহায়তা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কাজ। এই বহুমুখী ব্যস্ততার মধ্যেও টেসলা চায় মাস্ক তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি, রোবোট্যাক্সি এবং এআই-চালিত প্রযুক্তির উন্নয়নে মনোযোগ দিন। বোর্ডের চিঠিতে বলা হয়েছে, “ইলনের অনন্য নেতৃত্ব কেবল তার প্রতিভাই নয়, বরং টেসলায় প্রতিভা আকর্ষণ এবং ধরে রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। তাকে হারানো মানে কেবল তার দক্ষতা নয়, প্রতিভা ধরে রাখার একটি চুম্বক হারানো।”

এই পে-প্ল্যানের আওতায় মাস্ককে প্রতি শেয়ার ২৩.৩৪ ডলারে কিনতে হবে, যা ২০১৮ সালের প্ল্যানের সমান। শেয়ারগুলো দুই বছরের মধ্যে ভেস্ট হবে, তবে তাকে পাঁচ বছর ধরে রাখতে হবে। যদি ডেলাওয়্যার আদালত ২০১৮ সালের পে-প্ল্যান পুনর্বহাল করে, তবে এই অন্তর্বর্তী পুরস্কার বাতিল হবে, যাতে মাস্ক দ্বিগুণ অর্থ পান না।

২০১৮ সালের পে-প্ল্যানের আইনি জটিলতা

২০১৮ সালের পে-প্ল্যানটি, যার মূল্য তখন ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল (বর্তমানে শেয়ারের দামে ৯৩ বিলিয়ন ডলার), ডেলাওয়্যার চ্যান্সারি আদালতে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাতিল হয়। বিচারক ক্যাথলিন ম্যাককরমিক বলেছিলেন, টেসলার বোর্ড এই প্ল্যানের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করেনি এবং ছয়জন পরিচালকের মধ্যে পাঁচজন মাস্কের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন। টেসলা ২০২৪ সালের জুনে শেয়ারহোল্ডারদের ভোটে এই প্ল্যান পুনরনুমোদনের চেষ্টা করে, কিন্তু ডিসেম্বরে ম্যাককরমিক তা আবার বাতিল করেন। বর্তমানে এই মামলা ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্টে আপিলের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।

টেসলার বোর্ড জানিয়েছে, ২০১৮ সালের প্ল্যানের ফলে কোম্পানির বাজার মূলধন ৭৩৫ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও এটির জন্য ২.৩ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার-ভিত্তিক ক্ষতিপূরণ ব্যয় হয়েছে। তারা বলছে, এই অসাধারণ রিটার্ন সত্ত্বেও মাস্ক গত আট বছরে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতিপূরণ পাননি।

টেসলার ব্র্যান্ড এবং বিক্রয়ের চ্যালেঞ্জ

টেসলার শেয়ার মূল্য ২০২৫ সালের শুরু থেকে ১৯% কমেছে, যা মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে ট্রাম্পের সাথে তার সম্পর্কের কারণে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়ার ফলাফল। এসএন্ডপি গ্লোবাল মোবিলিটি গবেষণা অনুসারে, টেসলার গ্রাহক আনুগত্য ২০২৪ সালের জুনে ৭৩% ছিল, যা ২০২৫ সালের মার্চে ৪৯.৯%-এ নেমে আসে, যদিও মে মাসে তা ৫৭.৪%-এ উন্নতি করে। এই পতন মাস্কের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ডেট্রয়েট ও চীনের প্রতিযোগিতার কারণে। টেসলার সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিকে মুনাফা ১.৩৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪০৯ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে, এবং আয়ও কমেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য

বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সম্প্রদায়ের জন্য টেসলার এই পদক্ষেপ আলোচনার বিষয় হতে পারে, কারণ এটি কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং নির্বাহী ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বৈশ্বিক প্রবণতা প্রতিফলিত করে। ইলন মাস্কের মতো একজন দূরদর্শী নেতার উপর টেসলার নির্ভরতা বাংলাদেশের স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্যও শিক্ষণীয়, যেখানে প্রতিভা ধরে রাখা এবং উৎসাহিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে ব্র্যান্ডের ক্ষতি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্যও একটি সতর্কবার্তা, যে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক পদক্ষেপ ব্যবসায়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। টেসলার রোবোট্যাক্সি এবং এআই উদ্যোগ বাংলাদেশের প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্যও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে, যদি তারা এই ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে।

Avatar Of আনিস আফিফি
লিখেছেন:আনিস আফিফি
সম্পাদক
ফলো:
আমি আনিস আফিফি — একজন উদ্যোক্তা এবং ওয়েব ডেভেলপার, যার একটি বড় স্বপ্ন হলো মানবজাতির জন্য পৃথিবীকে আরও ভালো একটি জায়গায় পরিণত করা। আমি ব্র্যান্ড তৈরি করি, ডিজিটাল সমস্যাগুলোর সমাধান করি। এবং এমন একটি ভবিষ্যত তৈরি করতে চাই যা মানুষকে ক্ষমতায়িত করে।
মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

০%